বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Bermuda Triangle in Bengali
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Bermuda Triangle in Bengali : আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল নাম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল (Bermuda Triangle) যা শয়তানের ত্রিভুজ নামেও পরিচিত। যেখানে বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয়। অনেকে মনে করেন ঐ সকল অন্তর্ধানের কারণ নিছক দুর্ঘটনা, যার কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা। আবার চলতি উপকথা অনুসারে এসবের পেছনে দায়ী হল কোন অতিপ্রাকৃতিক কোন শক্তি বা বহির্জাগতিক প্রাণের উপস্থিতি (এলিয়েন)। তবে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে যে, যেসব দুর্ঘটনার উপর ভিত্তি করে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে চিহ্নিত করা হয়েছে তার বেশ কিছু ভুল পরিচালনা এবং কিছু লেখক দ্বারা অতিরঞ্জিত হয়েছে, এমনকি কিছু দুর্ঘটনার সাথে অন্যান্য অঞ্চলের দুর্ঘটনার কোনই পার্থক্য নেই।
শুকতারা Tv র এই পর্বে জানব বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের (Bermuda Triangle) আশ্চর্যজনক তথ্য সম্পর্কে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে অজানা তথ্য – Amazing Facts about Bermuda Triangle
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের (Bermuda Triangle) এই ত্রিভূজের উপর দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর থেকে উষ্ণ সমুদ্র স্রোত বয়ে গেছে। বিভিন্ন লেখকের বর্ণনায় বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের বিস্তৃতিতে ভিন্নতা রয়েছে। এই তীব্র গতির স্রোতই মূলত অধিকাংশ অন্তর্ধানের কারণ। এখানকার আবহাওয়া এমন যে হঠাৎ করে ঝড় ওঠে আবার থেমে যায়, গ্রীষ্মে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। বিংশ শতাব্দীতে টেলিযোগাযোগ, রাডার ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি পৌঁছানোর আগে এমন অঞ্চলে জাহাজডুবি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এই অঞ্চল বিশ্বের ভারী বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলকারী পথগুলোর অন্যতম। জাহাজগুলো আমেরিকা, ইউরোপ ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে যাতায়াত করে। এছাড়া এটি হল প্রচুর প্রমোদতরীর বিচরণ ক্ষেত্র। এ অঞ্চলের আকাশপথে বিভিন্ন রুটে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত বিমান চলাচল করে। ত্রিভূজের বিস্তৃতির বর্ণনায় বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউ মনে করেন এর আকার ট্রাপিজয়েডের মত, যা ছড়িয়ে আছে ফ্লোরিডা, বাহামা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং ইশোর পূর্বদিকের আটলান্টিক অঞ্চল জুড়ে, আবার কেউ কেউ এগুলোর সাথে মেক্সিকো উপসাগরকেও যুক্ত করেন। তবে লিখিত বর্ণনায় যে সাধারণ অঞ্চলের ছবি ফুটে ওঠে তাতে রয়েছে ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল, পুয়ের্তো রিকো, মধ্য আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপুঞ্জ এবং বাহামা ও ফ্লোরিডা স্ট্রেইটস এর দক্ষিণ সীমানা যেখান ঘটেছে অধিকাংশ দূর্ঘটনা।
স্টোফার কলম্বাস সর্বপ্রথম এই ত্রিভুজ বিষয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখেন। তিনি লিখেছিলেন যে তার জাহাজের নাবিকেরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি, আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এছাড়া তিনি এখানে কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশনার কথাও বর্ণনা করেছেন। তিনি ১১ই অক্টোবর, ১৪৯২ তে তার লগ বুকে লিখেন –triangle means the residence of devil। বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা প্রকৃত লগবুক পরীক্ষা করে যে মত দিয়েছেন তার সারমর্ম হল – নাবিকেরা যে আলো দেখেছেন তা হল স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত নৌকায় রান্নার কাজে ব্যবহৃত আগুন, আর কম্পাসে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল নক্ষত্রের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে। [নোটঃ মূলত এগুলা ভিত্তিহীন যুক্তি, রান্নার এলো এতোদুর পর্যন্ত আসা সম্ভব কিনা তা বুদ্ধিমান/বুদ্ধিমতি লোকেরা আন্দাজ করতে পারেন অতি সহজে, যদিও দৃশ্যমান হয়ে থাকে তবে তা পূর্বেকার ব্যাবহৃত দূরবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা সহজেই অনুমান করা যেতো, আর কম্পাসে সমস্যা সৃষ্টির মুল কারণ নক্ষত্রের অবস্থান পরিবর্তন নয় বরং অন্যকোন অতি প্রাকৃতিক কারণে হবে, তাৎক্ষণিক কম্পাসের উল্টা পাল্টা আচারণ তাৎক্ষণিক কোন কারণের মধ্যে তা আবদ্ধ]। ১৯৫০ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর ই. ভি. ডব্লিউ. জোন্স( E.V.W. Jones) সর্বপ্রথম এ ত্রিভুজ নিয়ে খবরের কাগজে লিখেন। এর দু বছর পর ফেইট (Fate) ম্যাগাজিনে জর্জ এক্স. স্যান্ড( George X. Sand) (সী মিস্ট্রি এট আওয়ার ব্যাক ডোর) (Sea Mystery At Our Back Door) শিরোনামে একটি ছোট প্রবন্ধ লিখেন, এবং ঐ প্রবন্ধে তিনি ফ্লাইট নাইনটিন ( ইউ এস নেভী-র পাঁচটি -টি বি এম অ্যাভেন্জার বিমানের একটি দল, যা প্রশিক্ষণ মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়) এর নিরুদ্দেশের কাহিনী বর্ণনা করেন এবং তিনিই প্রথম এই অপরিচিত ত্রিভূজাকার অঞ্চলের কথা সবার সামনে তুলে ধরেন। ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে ফ্লাইট নাইনটিন নিয়ে আমেরিকান লিজান (American Legion) ম্যগাজিনে লিখা হয়। বলা হয়ে থাকে এই ফ্লাইটের দলপতি কে নাকি বলতে শোনা গিয়েছে- We dont know where we are, the water is green, no white। এর অর্থ হলঃ আমরা কোথায় আছি জানি না, সবুজ বর্ণের জল, কোথাও সাদা কিছু নেই। এতেই প্রথম ফ্লাইট নাইনটিনকে কোন অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার সাথে যুক্ত করা হয়। এরপর ভিনসেন্ট গডিস (Vincent Gaddis) প্রাণঘাতী বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল( The Deadly Bermuda Triangle) নামে আর এক কাহিনী ফাঁদেন ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এর উপর ভিত্তি করেই তিনি আরও বিস্তর বর্ণনা সহকারে লিখেন ইনভিজিবল হরাইজন (Invisible Horizons) মানে অদৃশ্য দিগন্ত নামের বই। আরও অনেক লেখকই নিজ নিজ মনের মাধুরী মিশিয়ে এ বিষয়ে বই লিখেন, তারা হলেন জন ওয়ালেস স্পেন্সার, তিনি লিখেন লিম্বো অফ দ্যা লস্ট (Limbo of the Lost, 1969, repr. 1973), মানে বিস্মৃত অন্তর্ধান; চার্লস বার্লিটজ (Charles Berlitz) লিখেন দি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল(The Bermuda Triangle, 1974); রিচার্ড উইনার লিখেন দ্যা ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেল (শয়তানের ত্রিভূজ) (The Devils Triangle, 1974) নামের বই, এছাড়া আরও অনেকেই লিখেছেন। এরা সবাই ঘুরেফিরে একার্ট ( Eckert) বর্ণিত অতিপ্রাকৃতিক ঘটানাই বিভিন্ন স্বাদে উপস্থাপন করেছেন।
মূলত এই অঞ্চলটিকে নিয়ে অনেক পন্ডিত বিষেশজ্ঞদের অনেক ধারণা রয়েছে, তারা অতি প্রাকৃতিক ঘটনাকে উপেক্ষা করে তারা তাদের মতামত নানান ব্যাখা দিয়েছেন যা প্রকৃতপক্ষে গভীর বিশ্লেষণে ওদের ধারণার বিপক্ষে যায়। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ঘটনার পরিপেক্ষিতে মানুষ এখন ঐ সব উপেক্ষা করে চলে, তথাপি ঐ রকম ঘটনা এখনো শুনতে পাওয়া যায়না বলে ধরে নেওয়া উচিত না যে উন্নত প্রযুক্তির অভাবে তখনকার সময় এমন ঘটনা ঘটতো বরং এটা বলা চলে যে ঐ অতিপ্রাকৃতিক ঘটনাসুমহ এখন ঘটনে, কেনো ঘটেনা এবং ঠিক কি কারণেই পূর্বে এমন হয়েছিলো তা কারো কাছেই পরিষ্কার নয়। যার উপযুক্ত প্রমাণঃ ফ্লাইট নাইনটিন, এই ফ্লাইট নাইনটিন উদ্ধার করার জন্য পরবর্তীতে কিছু জাহাজ পাঠানো হয়েছিলো তাও আর ফিরে আসেনি। এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল যা শয়তানের ত্রিভুজ নিয়ে পূর্বে ঘটা নানা ঘটনা রয়েছে যা একজন সত্যান্বেষী মানুষকের বিবেক নাড়া দিবে, পরবর্তী কোন আপডেটে তা ব্যাখা করা হবে ।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Bermuda Triangle in Bengali Q&A
- বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল (Bermuda Triangle) কি?
Ans. আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল নাম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল (Bermuda Triangle) যা শয়তানের ত্রিভুজ নামেও পরিচিত।
- বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের (Bermuda Triangle) উপর দিয়ে কোন সমুদ্র স্রোত বয়ে গেছে?
Ans. বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের (Bermuda Triangle) এই ত্রিভূজের উপর দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর থেকে উষ্ণ সমুদ্র স্রোত বয়ে গেছে।
◆ আরও দেখুন :-
- সুয়েজ খাল – দৈর্ঘ্য, গভীরতা, অবস্থান, খননকার্য, অর্থনৈতিক প্রভাব
- সাহারা মরুভূমি – পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বালির স্তূপ, বিস্তার ও আয়তন
- মিশরের পিরামিড – নির্মান করার রহস্য ও ভেতরের দৃশ্য | খুফু’র পিরামিড
- ফারাক্কা বাঁধ – নির্মাণের ইতিহাস, চুক্তি ও ক্ষয়ক্ষতি
- সুন্দরবন – পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন
আশা করি এই পোস্টটি বা ” বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য – Amazing Facts about Bermuda Triangle in Bengali ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।