লোহিত সাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য – Amazing Facts about Red Sea in Bengali
লোহিত সাগর : ভারত মহাসাগরের এক বিশেষ অংশ লোহিত সাগর। বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ সমুদ্র বানিজ্য এই সাগরের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশকে পৃথক করেছে লোহিত সাগর। এই সাগরটি ভারত মহাসাগরের অংশ।
বিশ্ব বানিজ্যের ধমনী হিসেবে পরিচিত লোহিত সাগর সম্পর্কে জানব শুকতারা Tv র এই পর্বে।
লোহিত সাগর (Red Sea) সংক্ষেপে পরিচিতি |
|
অবস্থান (Location) | ইরিথ্রিয়ান সাগর, এটি হল আফ্রিকা ও এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত ভারত মহাসাগরের একটি সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রবেশপথ। |
স্থানাঙ্ক (Geometry) | ২২° উত্তর ৩৮°পূর্ব |
সর্বাধিক গভীরতা (Maximum depth) | ৩,০৪০ মিটার (3,040 M) |
গড় গভীরতা (Average depth) | ৪৯০ মিটার (১,৬১০ ফু) |
পৃষ্ঠতল অঞ্চল (Surface area) | ৪,৩৮,০০০ কিমি২ (4,38,000 KM2) |
জলের আয়তন (Volume of water) | ২,৩৩,০০০ কিমি৩ (2,33,000 KM3) |
সর্বাধিক দৈর্ঘ্য (Maximum length) | ২,২৫০ কিমি (2,250 KM) |
সর্বাধিক প্রস্থ (Maximum width) | ৩৫৫ কিমি (355 KM) |
জলের লবণাক্ততার মাত্রা (The salinity level of the water) | ৩.৮ শতাংশ (3.8 percent) |
লোহিত সাগরের জল লাল কেন?
লোহিত সাগরে জলে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে, এগুলো বাতাস থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে ট্রিকোডেসামিয়াম রিথ্রিয়াম নামে এক ধরনের অজৈব যৌগ গঠন করে। এর রঙ লাল হওয়ায় এই সাগরের জল লাল দেখায়। এছাড়াও আগ্নেয়গিরির অব্যাহত অগ্নুৎপাতের কারণেও সাগরের জল লাল রঙের হতে পারে। এই রঙ কিছু স্থানে দেখা যায় মাত্র। তাই, এ সাগরের নাম লাল সাগর বা লোহিত সাগর।
লোহিত সাগরের আয়তন
লোহিত সাগরের আয়তন প্রায় ৪ লক্ষ ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার। লম্বাটে এই সাগরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ৯শ কিলোমিটার এবং সর্বাধিক প্রস্থ মাত্র ৩৫৫ কিলোমিটার।
লোহিত সাগরের অবস্থান
লোহিত সাগরের দুই পাড়ে ৬ টি দেশের অবস্থান। সাগরটির পূর্ব পাড়ে রয়েছে সৌদি আরব ও ইয়েমেন এবং পশ্চিম পাশে মিশর, সুদান, ইরিত্রিয়া ও জিবুতির অবস্থান। লোহিত সাগরের দক্ষিণ দিকে রয়েছে বাব এল মান্দেব প্রণালী ও এডেন উপসাগর। এই প্রণালী ও উপসাগরের মাধ্যমেই লোহিত সাগর ভারত মহাসাগরের সাথে যুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে সাগরটির উত্তর পাশে রয়েছে সিনাই উপদ্বীপ; সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিম দিকে সুয়েজ উপসাগর ও পূর্ব দিকে আকাবা উপসাগরের অবস্থান।
লোহিত সাগরের গভীরতা
লোহিত সাগরের গড় গভীরতা প্রায় ১ হাজার ৬০০ ফুট এবং সাগরের মাঝবরাবর এর সর্বোচ্চ গভীরতা প্রায় ৮ হাজার ২শ ফুট। লোহিত সাগরের প্রায় ৪০ ভাগ অঞ্চল অগভীর সমুদ্র।
লোহিত সাগরের মহীসোপান
কোন স্থলভাগের নিকটবর্তী অগভীর সমুদ্রিক অঞ্চল কে মহীসোপান বলা হয়। মহীসোপানের গভীরতা সাধারণত ৫০০ থেকে ৬০০ ফুটের মত হওয়ায়, অবারিত সমুদ্রের জলের চেয়ে মহীসোপান এলাকার জলের বৈশিষ্ট্য আলাদা। আর তাই মহীসোপান অঞ্চলে নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী বসবাস করে। লোহিত সাগরের মহীসোপান অত্যন্ত প্রশস্ত হওয়ায়, এ সাগরে রয়েছে নানা ধরনের জলজ প্রানী। লোহিত সাগরে প্রায় ১ হাজার প্রজাতির অমেরুদন্ডী প্রাণী ও ২০০ রকমের প্রবাল দেখতে পাওয়া যায়। এই সাগরের জলের উপর এবং নিচের সৌন্দর্যকে পুঁজি করে, গড়ে উঠেছে বহু পর্যটন ব্যবস্থা।
সুয়েজ খাল খনন করার গুরুত্ব
লোহিত সাগর কে ভূমধ্যসাগরের সাথে যুক্ত করেছে সুয়েজ খাল। সমুদ্রপথে ইউরোপ থেকে এশিয়ার দূরত্ব কমাতে সুয়েজ খাল খনন করা হয়েছিল। এরপর থেকে বিশ্বের প্রায় ১০ ভাগেরও বেশি সমুদ্র বানিজ্য লোহিত সাগরের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাই লোহিত সাগর কে বিশ্ব বানিজ্যের ধমনী বলা হয়। লোহিত সাগরের আশে পাশের ২০ টি দেশ এই সাগর কে তাদের প্রধান বানিজ্য পথ হিসেবে ব্যবহার করে। লোহিত সাগরই সবচেয়ে বড় ও দ্রুত বর্ধনশীল সমুদ্র পথ। মিশর তাদের সুয়েজ খালে জাহাজ পরিবহনের সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে, সমানতালে বাড়ছে লোহিত সাগরের বানিজ্যিক কর্মকান্ড। জাতিসংঘের পূর্বানুমান অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে এই সমুদ্র পথের বানিজ্য ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। যদিও এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের দ্বিমত রয়েছে, কারণ লোহিত সাগর পাড়ে আরব বা আফ্রিকান কোন দেশেরই আন্তর্জাতিক মানের গভীর সমুদ্র বন্দর এখনও নেই।
লোহিত সাগরের জলের লবণাক্ততার মাত্রা
লোহিত সাগরের জলের লবণাক্ততার মাত্রা ৩.৮ শতাংশ। লোহিত সাগরের চারপাশের অঞ্চল মরুভূমি হওয়ায়, এ সাগরের জল অতি দ্রত বাষ্প হয়ে যায়। এর ফলে লোহিত সাগরের জল দিন দিন আরো লবণাক্ত হচ্ছে। অতীতে লোহিত সাগর একটি সরু উপসাগরের মাধ্যমে মৃত সাগরের সাথে যুক্ত ছিল। মৃত সাগরের লবণাক্ততার পরিমাণ প্রায় ৩৪.২ শতাংশ, যা লোহিত সাগরের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। অত্যধিক লবণের কারণে মৃত সাগরের জলে অনায়াসে হাত পা ছড়িয়ে ভেসে থাকা যায়। এমনকি কেউ যদি সাতার কাটতে নাও জানে, সেও এই পানিতে ডুববে না।
লোহিত সাগর থেকে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর – Red Sea QNA
1.লোহিত সাগর কোন দুটি মহাদেশকে পৃথক করেছে?
Ans: এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশকে পৃথক করেছে লোহিত সাগর।
2.মহীসোপান কাকে বলা হয়?
Ans: কোন স্থলভাগের নিকটবর্তী অগভীর সমুদ্রিক অঞ্চল কে মহীসোপান বলা হয়।
3.লোহিত সাগর কে ভূমধ্যসাগরের সাথে যুক্ত করেছে কোন খাল ?
Ans: লোহিত সাগর কে ভূমধ্যসাগরের সাথে যুক্ত করেছে সুয়েজ খাল।
4.সুয়েজ খাল কেন খনন করা হয়েছিল?
Ans: সমুদ্রপথে ইউরোপ থেকে এশিয়ার দূরত্ব কমাতে সুয়েজ খাল খনন করা হয়েছিল।
5.লোহিত সাগরের জলের লবণাক্ততার মাত্রা কত ?
Ans: লোহিত সাগরের জলের লবণাক্ততার মাত্রা ৩.৮ শতাংশ।
6.লোহিত সাগর কে বিশ্ব বানিজ্যের ধমনী বলা হয় কেন ?
Ans: বিশ্বের প্রায় ১০ ভাগেরও বেশি সমুদ্র বানিজ্য লোহিত সাগরের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাই লোহিত সাগর কে বিশ্ব বানিজ্যের ধমনী বলা হয়।
- লোহিত সাগর কি?
Ans. ভারত মহাসাগরের এক বিশেষ অংশ লোহিত সাগর। বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ সমুদ্র বানিজ্য এই সাগরের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশকে পৃথক করেছে লোহিত সাগর। এই সাগরটি ভারত মহাসাগরের অংশ।
- মৃত সাগরের অপর নাম কি?
Ans. মৃত সাগরের অপর নাম হলো লোহিত সাগর।
- মৃত সাগর কি, মৃত সাগর কোথায় আছে ?
Ans. আমরা সবাই বিশ্বাস করি মানুষের মৃত্যুর পর তাঁর স্থান হয় স্বর্গে বা নরকে । কিন্তু মৃত্যুর সাগর সেটা আবার কি ? নামটা নিশ্চয়ই অদ্ভুত ঠেকছে আপনার কাছে । জর্ডন ও সিরিয়ার মাঝখানে রয়েছে এই সাগর । প্রকৃতির অনন্য বিস্ময়কর সৃষ্টি এই মৃত সাগর ।
- লোহিত সাগরের পূর্বনাম কি?
Ans. সাইনাস আরাবিকাস।
◆ আরও দেখুন :-
- সুয়েজ খাল – দৈর্ঘ্য, গভীরতা, অবস্থান, খননকার্য, অর্থনৈতিক প্রভাব
- সাহারা মরুভূমি – পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বালির স্তূপ, বিস্তার ও আয়তন
- মিশরের পিরামিড – নির্মান করার রহস্য ও ভেতরের দৃশ্য | খুফু’র পিরামিড
- ফারাক্কা বাঁধ – নির্মাণের ইতিহাস, চুক্তি ও ক্ষয়ক্ষতি
- সুন্দরবন – পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন
আশা করি এই পোস্টটি বা ” লোহিত সাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য – Amazing Facts about Red Sea in Bengali ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।