Close Ad close
Breaking
Mon. Nov 18th, 2024

ফারাক্কা বাঁধ – Farakka Bridge

ফারাক্কা বাঁধ (Farakka Bridge) গঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত একটি বাঁধ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় এই বাঁধটি অবস্থিত। ১৯৬১ সালে এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯৭৫ সালে। সেই বছর ২১ এপ্রিল থেকে বাঁধ চালু হয়। ফারাক্কা বাঁধ ২,২৪০ মিটার (৭,৩৫০ ফু) লম্বা ।

 এটি শুধুমাত্র একটি বাঁধই নয়, এই অবকাঠামোটি সড়ক ও রেল যোগাযোগ সেতু হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বাঁধটিতে মোট ১০৯ টি গেট রয়েছে। ফারাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে এই বাঁধ থেকে জল সরবরাহ করা হয়। ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে কলকাতা বন্দরের কাছে হুগলি নদীর পলি ধুয়ে পরিষ্কার করার জন্য ফারাক্কা বাঁধ তৈরি করা হয়। হিন্দুস্তান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় বাঁধটি নির্মাণ করে।

  শুকতারা Tv এই পর্বে জানব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম এই ফারাক্কা বাঁধের সম্পর্কে।

ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ইতিহাস

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর গঙ্গার জল বন্টন নিয়ে ভারতের সাথে আলোচনা শুরু করে। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার জলবণ্টন বিষয়ে আলোচনা করেন। এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় যে, উভয় দেশ একটি চুক্তিতে আসার আগে ভারত ফারাক্কা বাঁধ চালু করবে না। যদিও বাঁধের একটি অংশ পরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালে মাত্র ১০ দিনের জন্য ভারতকে গঙ্গা নদীর ৩১০ থেকে ৪৫০ কিউসেক পানি অপসারণ করার অনুমতি দেয়। কিন্ত ভারত ১৯৭৬ সালের শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত গঙ্গা নদী থেকে ১১৩০ কিউসেক পানি অপসারণ করে পশ্চিমবঙ্গের ভাগিরথী-হুগলী নদীতে প্রবাহিত করে। 

ফারাক্কা বাঁধ সম্পর্কিত চুক্তি

ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী নদীতে ৭০ হাজার কিউসেক জল থাকলে উভয় দেশ পাবে ৩৫ হাজার কিউসেক। আর ৭৫ হাজার কিউসেক এর বেশি জল থাকলে ৪০ হাজার কিউসেক পাবে ভারত, বাকিটা পাবে বাংলাদেশ। অথচ ভারতের খেয়াল খুশিমত বাঁধ থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে জল অপসারণ ও বন্ধের ফলে; শুষ্ক মৌসুমে তীব্র খরা ও বর্ষা মৌসুমে প্রচন্ড বন্যার কবলে পড়ছে বাংলাদেশ। ফারাক্কা বাঁধ কেন্দ্রিক এই স্বেচ্ছাচারিতার ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত নিজেও মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে ভারতের ক্ষয়ক্ষতি

একচল্লিশ বছর আগে গঙ্গার উপর যখন ফারাক্কা বাঁধ চালু করা হয়, তার একটা প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জলপ্রবাহের একটা অংশকে হুগলী নদীতে চালিত করে কলকাতা বন্দরকে পুনরুজ্জীবিত করা।সে উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল না-হলেও ফারাক্কার জেরে গঙ্গার উজানে যে পলি পড়া শুরু হয়েছে, তারে জেরে প্রতি বছরই বর্ষার মরশুমে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ছে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের একটা বিস্তীর্ণ অংশ।। বহুদিন ধরেই মালদহ-মুর্শিদাবাদ জেলার গঙ্গা তীরবর্তী দুর্ভোগ ও বিপর্যয়কবলিত মানুষ ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। একই সঙ্গে তারা ক্ষতিপূরণ, ভূমি ও পুনর্বাসন দাবি করে আসছে। অব্যাহত বন্যা ও নদীভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণেরও তারা দাবি জানিয়ে আসছে। বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গের জন্যও ফারাক্কা বাঁধ বড় রকমের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, পার্শ্ববর্তী বিহারও ফারাক্কা বাঁধের কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেখানে চলমান বন্যায় ১০ লাখের বেশি মানুষ ও ২ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিহার রাজ্য সরকারের দাবি, ফারাক্কা বাঁধের কারণেই এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং প্রায় প্রতিবছরই রাজ্য বন্যা ও নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে।

ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি

শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার জল অপসারণের ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে বাংলাদেশকে কৃষি, মৎস্য, বনজ, শিল্প, নৌ পরিবহন, জল সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়।

ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর নাব্যতা   

ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে জল প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীর নাব্যতা কমে যায়। ফলে প্রায় বাংলাদেশের বর্তমানে প্রায়ই বড় বন্যা সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে মাটির লবণাক্ততা   

ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলের মাটির লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা খুলনার রুপসা নদীর পানিতে ৫৬৩.৭৫ মিলিগ্রাম/লিটার ক্লোরাইড আয়নের উপস্থিতি পেয়েছেন। তাছাড়া, মিঠা পানির সরবরাহ কমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে লবন, ভূ-অভ্যন্তরস্থ পানিতে প্রবেশ করছে।

ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে কৃষি কার্যে প্রভাব   

কৃষির অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। জলের স্তর অনেক নেমে যাওয়ার সেচ প্রকল্প মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। 

ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে মৎস্য    চাষে প্রভাব

জল অপসারণের ফলে পদ্মা ও এর শাখা-প্রশাখাগুলোর প্রবাহের ধরন, জলপ্রবাহের বেগ, মোট দ্রবীভূত পদার্থ (Total dissolved solids) এবং লবণাক্ততার পরিবর্তন ঘটেছে। এই বিষয় গুলো মাছের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গঙ্গার জলের উপর এই এলাকার প্রায় দুই শতেরও বেশি মাছের প্রজাতি ও ১৮ প্রজাতির চিংড়ী নির্ভর করে। ফারাক্কা বাঁধের জন্য মাছের সরবরাহ কমে যায় এবং কয়েক হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েন।

ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে নৌ-পরিবহনের উপর প্রভাব   

শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের ৩২০ কিলোমিটারের বেশি নৌপথ নৌ-চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে, কয়েক হাজার লোক বেকার হয়ে পড়ে, নৌ-পরিবহনের খরচ বেড়ে যায়।

ফারাক্কা বাঁধ : QNA

1.ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের কাজ কত সালে শুরু হয়?

Ans: ১৯৬১ সালে।

2.ফারাক্কা বাঁধ কোথায় অবস্থিত?

Ans: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় এই বাঁধটি অবস্থিত।

3.ফারাক্কা বাঁধ কোন নদীর উপর অবস্থিত?

Ans: গঙ্গা নদী।

4.ফারাক্কা বাঁধটিতে মোট কতগুলি গেট রয়েছে?

Ans: ১০৯ টি ।

5.ফারাক্কা বাঁধটি কত মিটার লম্বা ?

Ans: ২,২৪০ মিটার (৭,৩৫০ ফু)।

6.ফারাক্কা বাঁধটি কবে চালু হয়?

Ans:১৯৭৫ সালে ২১ এপ্রিল থেকে বাঁধ চালু হয়।

আশা করি এই পোস্টটি ” ফারাক্কা বাঁধ – Farakka Bridge ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *