Close Ad close
Breaking
Sun. Nov 17th, 2024

হরিয়ানা (ভারত): ইতিহাস, হ্রদ – জলাশয়, ঐতিহাসিক স্থান

হরিয়ানা : ভারতের একটি বিশেষ রাজ্য হলো হরিয়ানা। হরিয়ানাতে প্রতি বর্গ কিমি ৪৪২১২ মানুষ বসবাস করে থাকে। হরিয়ানা ভারতের অন্যতম ধনী রাজ্য। হরিয়ানা রাজ্যের মাথাপিছু আয় ৬৭,৮৯১ টাকা, যা ভারতে তৃতীয় সর্বাধিক। এছাড়া দেশের সর্বাধিক সংখ্যক গ্রামবাসী কোটিপতি হরিয়ানা রাজ্যে বাস করেন। হরিয়ানা রাজ্যের লিঙ্গ অনুপাত ভারতের মধ্যে সর্বনিম্ন।

  হরিয়ানার ইতিহাস, হ্রদ – জলাশয়, ঐতিহাসিক স্থান ইত্যাদি সম্পর্কে জানব শুকতারা Tv র এই পর্বে।

হরিয়ানা (ভারত) সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য

হরিয়ানা ভারতের একটি বিশেষ রাজ্য
হরিয়ানার রাজধানী চণ্ডীগড়
জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৫৩ লক্ষ ৫৪ হাজার
নারী / পুরুষ ৮৭৭ / ১০০
আয়তন ৪৪২১২ বর্গ কিলােমিটার
জনসংখ্যা / প্রতি বর্গ কিমি ৫৭৩ জন
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৯.৯০ শতাংশ (২০০১-২০১১)
সাক্ষরতার হার ৭৬.৬৪ শতাংশ
প্রধান ভাষা হিন্দি, পাঞ্জাবি
রাজ্য প্রতীক পাখি – ব্ল্যাক ফ্র্যাঙ্কোলিন, পশু – নীলগাই, ফুল – পদ্ম, গাছ – অশ্বত্থ
আবহাওয়া হরিয়ানার আবহাওয়া পাঞ্জাবেরই মতাে
বেড়ানাের উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে মার্চ মাস

হরিয়ানার ইতিহাস :

মহাভারতের বিখ্যাত কুরুক্ষেত্র- র যুদ্ধ ঘটেছিল আজকের হরিয়ানায় । সে হিসেবে হিন্দু ধর্মের ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই রাজ্য । মাত্র কয়েক দশক আগেও হরিয়ানা ছিল পাঞ্জাব রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত । ১৯৬৬ – তে ভাষার ভিত্তিতে পৃথক করে নতুন রাজ্য গঠন করা হয় । ১৮৫৭ – এর স্বাধীনতা যুদ্ধে পাঞ্জাব প্রদেশের বেশিরভাগ অংশ ইংরেজদের পক্ষ গ্রহণ করলেও হরিয়ানা ছিল সরকারের বিরূদ্ধে । পরবর্তীকালেও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছে এই রাজ্য। 

হরিয়ানা (ভারত): ইতিহাস, হ্রদ - জলাশয়, ঐতিহাসিক স্থান

 ৪৪২১২ বর্গ কিমি বিস্তৃত হরিয়ানার উত্তরে সীমানা গড়েছে হিমাচল প্রদেশ , দক্ষিণে রাজস্থান , পূর্বে উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমে পাঞ্জাব রাজ্য । এখানে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা চাষবাষ । দেশের প্রয়ােজনীয় খাদ্যের বড়াে অংশ যােগান দেয় হরিয়ানা । এখানকার ফসল বিদেশেও রপ্তানী হয় । দুধ ও দুধ থেকে প্রস্তুত নানান সামগ্রী উৎপাদনেও এ রাজ্যের খ্যাতি যথেষ্ট । হরিয়ানা অবস্থানকালে ঘুরে নেওয়া যায় সুলতানপুর , দমদমা লেক , সােহনা , সূরষকুণ্ড , বাদখাল লেক , হােদাল , পানিপথ , কুরুক্ষেত্র , কারুয়া লেক , কালেশ্বর ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির মতাে আরও নানান দর্শনীয় স্থান । 

 পাঞ্জাবের সঙ্গে এ রাজ্যের রাজধানী চণ্ডীগড় । রাজধানী শহর সম্পর্কে আরও জানতে পাঞ্জাব রাজ্যের ‘ চণ্ডীগড় ’ দেখুন । 

হরিয়ানার হ্রদ – জলাশয় : 

কার্নাল লেক (হরিয়ানার হ্রদ – জলাশয়)-

আরও এক ঐতিহাসিক স্থান কার্নাল লেক । ১৭৬৩ – তে ঝিন্দ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল এই লেক , তারপর ব্রিটিশদের হাতে যায় । স্থানীয় মানুষের ধারণা মহাভারতের কৌরবদের কালেও ছিল এই হ্রদ । কার্নালকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মনােরম প্রাকৃতিক পরিবেশ । লেকে বােটিং – এরও ব্যবস্থা রয়েছে ।  

বাদখাল লেক (হরিয়ানার হ্রদ – জলাশয়) –

৭৬৫ ফুট উচুতে আরাবল্লীর ঢালে ১২৭ একর ব্যাপ্ত কৃত্রিম হ্রদ বাদখাল । শীতের সময় পরিযায়ী পাখিরা আসে এই হ্রদে । চুড়ুইভাতি করার মতাে পরিবেশ গড়ে উঠেছে এখানে । লেকের জলে সাঁতার কাটার ও বােটিং – এর সুবিধা আছে । অদুরের শিব , হনুমান মন্দির ও ফুলের বাগানগুলি দেখে নেওয়া যায় অল্প সময়েই ।

সুলতানপুর বার্ড স্যাংচুয়ারি (হরিয়ানার হ্রদ – জলাশয়) –

প্রায় ৪০০ – একর জলাভূমিতে বাসা বেঁধে রয়েছে শতাধিক প্রজাতির । পাখি । এই স্থানটিকে বর্তমানে সুলতানপুর পক্ষী আলয় বলা হয়ে থাকে । শীতকালে স্থানীয় পাখিদের সঙ্গে যােগ দেয় বিদেশ থেকে আসা নানান প্রজাতির পাখি ।। ফলে এই সময় সুলতানপুরে অবশ্যই ঘুরে আসতে হয় । ওয়াচ টাওয়ারের ওপর থেকে দূরবীন দিয়ে পাখিদের অঙ্গভঙ্গির পুঙ্খানুপুঙ্খ লক্ষ্য করা যায় ।

হরিয়ানার পাহাড় : 

সােনা পাহাড় (হরিয়ানার পাহাড়) – 

হিমাচল ভ্রমণে অন্তত একবার কিছু সময়ের জন্য যেতে হয় সােনা পাহাড়ে । অতীতে নাকি নদীর চরে মিলত সােনা । আর সেই থেকেই এই পাহাড়ের নাম সােনা পাহাড় । টিলার ওপর দাঁড়িয়ে । চারপাশের দৃশ্য দেখতে মন্দ লাগে না । সূর্যাস্তের সময় এই দৃশ্য মহিমা বেড়ে যায় কয়েক গুণ । 

হরিয়ানার ঐতিহাসিক স্থান :

পিঞ্জার , কুণাল , নলগড় (হরিয়ানার ঐতিহাসিক স্থান) – 

বনবাসকালে পাণ্ডবরা । নাকি কিছু দিন থেকে গেছে পিঞ্জারে । এখন এই শহরটি বিখ্যাত নবাব ফিডাই খানের গড় ৭ ধাপের । পিঙ্গোর উদ্যানের জন্য । সমগ্র দেশ থেকে ভ্রামণিকরা হরিয়ানা ভ্রমণে এসে দেখে যান সপ্তদশ শতাব্দীতে । তৈরি এই অদ্ভুত উদ্যানটিকে । মােগল ও রাজস্থানী শৈলীর শিশমহল , রংমহল , জলমহলের মতাে সুসজ্জিত এই উদ্যানের নাম পরিবর্তীত হয়ে যাদবীন্দ্র উদ্যান হয়েছে । ফিডাই – এর হাতে গড়া তিনটি প্রাসাদও আছে এখানে । ছােটো চিড়িয়াখানা , পক্ষীশালা , শিশু উদ্যান , ভেদর স্যাংচুয়ারিটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে পিজোর ভ্রমণের সময় ।

 সামান্য এগােতেই হাজার বছর আগে তৈরি ভীমা দেবীর মন্দির দেখতে পাওয়া যায় । এই মন্দিরের ভাস্কর্য দেখে অবাক হন ভ্রামণিকরা । আরও কিছুটা এগিয়ে হিসার জেলার কুণাল গ্রাম ঘুরে নেওয়া যায় । এখানে হরপ্পা সভ্যতার থেকেও প্রাচীন সভ্যতার হদিশ মিলেছে । খননে মিলেছে প্রায় ৫০০০ বছরের প্রাচীন সিলমােহর , রুপাের মুকুট , গলার হার ইত্যাদি । প্রত্নতাত্ত্বিক দপ্তর । এখনও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আরও কিছু আবিষ্কারের জন্য।

 পিঞ্জোর থেকে ৩৫ কিমি দূরে নলগড় । হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই শহরটি ১১ শতকে তৈরি চন্দেলা রাজাদের দূর্গনগরী ।

 চণ্ডীগড় থেকে পিঞ্জোর যাওয়ার পথে দেখে নেওয়া যায় মােরনী পাহাড় । পাইন ও পিপল বৃক্ষে ভরপুর এই পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার মতাে । 

পানিপথ (হরিয়ানার ঐতিহাসিক স্থান) – 

এইখানেই বাবরের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন দিল্লির সম্রাট ইব্রাহিম লােধী । এ যুদ্ধ পানিপথের প্রথম যুদ্ধ নামে খ্যাত । ১৫২৬ – এ এখান থেকেই মােগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস লেখা শুরু হয় ।। যুদ্ধের স্মারক হিসেবে যুদ্ধের নানান ঘটনাবলী পাথরে খােদাই করে বসানাে হয়েছে । এরপরেও অবশ্য আরও দুটি পানিপথের যুদ্ধ ঘটেছে । আকবরের সঙ্গে হিমুর ( ১৫৫৬ ) ও আহম্মদ শাহ দুরানীর সঙ্গে মারাঠা বাহিনীর ( ১৭৬১ ) যুদ্ধের ইতিহাসও বর্ণনা করছে এই যুদ্ধ প্রান্তর । যুদ্ধ প্রান্তরের খুঁটিনাটির সঙ্গে দেখে নেওয়া যায় ফকির আলি কালান্দার সমাধি ক্ষেত্র । এছাড়াও চলতে ফিরতে দেখে নেওয়া যায় তাঁত শিল্পের নানান কারখানা । এখানে তৈরি সামগ্রী যাচ্ছে ইউরােপ , আমেরিকা ও জাপানে ।

আম্বালা (হরিয়ানার ঐতিহাসিক স্থান) – 

বর্তমান হরিয়ানার অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র আম্বালার প্রতিষ্ঠা ব্রিটিশদের হাতে ১৮৪৩ – এ । ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে গড়ে ওঠা এই শহরে দেখতে পাওয়া যায় ১৯৬৫ – র ইন্দো – পাক যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ সেন্ট জনস ক্যাথিড্রাল , রেস কোর্স । এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আবহাওয়াও বেশ উপভােগ্য । তবে ভ্রমণিকদের তেমন দর্শন সুখ দিতে না পাড়ায় এখনও সিমলা , অমৃতসর , লুধিয়ানা যাওয়ার জংশন হিসেবেই ব্যবহার হচ্ছে ।

হরিয়ানার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান :

কুরুক্ষেত্র (হরিয়ানার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান) –

মহাভারত খ্যাত কুরুক্ষেত্রের পর্যটন মূল্য তেমন না হলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান । আর্যদেরও তীর্থস্থান ছিল এই কুরুক্ষেত্র । কৌরব ও পাণ্ডবদের পূর্বপুরুষ কুরু এখানেই তপস্যা করতেন তাই এইস্থানের নাম এমনতর । এখানেই শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে শ্রীমদভগবদগীতা নির্গত হয়েছিল । এখানকার সূর্যকুণ্ডে স্নানে পুণ্য মেলে । হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীদের মতে এখানকার ধূলিকণারও ক্ষমতা আছে মানুষের সমস্ত পাপ বিনাশ করার ।১৫ কিমি দীর্ঘ ব্রহ্মাসর জলাশয়টিও পুণ্যের আকর । সরােবরের কাছে রয়েছে শিবের মন্দির । শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের বাসস্থানে পরিণত হয় এই জলাশয় । পট্টচিত্র , মধুবনী , পিছাবনী , কাংড়া শৈলীর ছবিতে সমৃদ্ধ শ্রীকৃষ্ণ মিউজিয়ামটি অবশ্যই দেখতে হয় । ব্রহ্মাসরের তীরে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সুবিশাল প্যানােরমিক ভিউটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে । এছাড়াও রয়েছে কুরুক্ষেত্র , থানেশ্বর ও বাণগঙ্গা জলাশয় , ভিষ্মকুণ্ড , অভিমন্যুক্ষেত্র , গীতাভবন , সীতামাঈ , দুর্গামন্দির , জ্যোতিসর কুণ্ড , সুবিশাল বটবৃক্ষ , শঙ্করাচার্য মঠ , কর্ণ মন্দির , সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতাে আরও অনেক দর্শনীয় স্থান । কুরুক্ষেত্রের একাংশে খনন করে পাওয়া গেছে খ্রি পূ . ৩০০ – র নানা নিদর্শন । অদূরের জুম্মা মসজিদ , পাথরিয়া মসজিদ , চিনিওয়ালি মসজিদ , শেখ চিল্পী জালালের সমাধি , মুসলিম দূর্গও দেখে নেওয়া যায় একসঙ্গে ।

 তিন কিমি দূরে হর্ষবর্ধনের তৈরি থানেশ্বর মহাদেব মন্দিরটি হিন্দুদের আরেক তীর্থস্থান । এছাড়া সিংহবাহিনী অম্বিকা ও সন্তোষীমাতাসহ আরও নানান মন্দির রয়েছে এই পবিত্র ভূমিতে । রাজা হর্ষবর্ধনের রাজধানী ছিল থানেশ্বর , ফলে এইস্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্বও কিছু কম নয়।

হরিয়ানা (ভারত) প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ) :

  1. মহাভারতের বিখ্যাত কুরুক্ষেত্র- র যুদ্ধ কোথায় ঘটেছিল?

Ans : হরিয়ানায় ।

  1. হরিয়ানার রাজধানী কি?

Ans : চণ্ডীগড় ।

  1. হরিয়ানার জনসংখ্যা কতো?

Ans : প্রায় ২ কোটি ৫৩ লক্ষ ৫৪ হাজার ।

  1. হরিয়ানায় নারী / পুরুষ অনুপাত কতো?

Ans : ৮৭৭ / ১০০ জন ।

  1. হরিয়ানার আয়তন কতো?

Ans : ৪৪২১২ বর্গ কিলােমিটার ।

  1. হরিয়ানার জনসংখ্যা / প্রতি বর্গ কিমিতে কতো?

Ans : ৫৭৩ জন

  1. হরিয়ানার প্রধান ভাষা কি?

Ans : হিন্দি, পাঞ্জাবি

  1. সােনা পাহাড় কোথায় অবস্থিত?

Ans : হরিয়ানায় ।

  1. কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ কোথায় হয়েছিল?

Ans : হরিয়ানায় ।

  1. পানিপথের যুদ্ধ কোথায় হয়েছিল?

Ans : হরিয়ানায় ।

 

◆ আরও দেখুন :-

হরিয়ানা (ভারত): ইতিহাস, হ্রদ – জলাশয়, ঐতিহাসিক স্থান

আশা করি এই পোস্টটি বা ” হরিয়ানা (ভারত): ইতিহাস, হ্রদ – জলাশয়, ঐতিহাসিক স্থান ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *