Close Ad close
Breaking
Sun. Nov 17th, 2024
সুচিত্রা মিত্র জীবনী - বাঙালী কণ্ঠশিল্পী, রবীন্দ্রসংগীত গায়িকাসুচিত্রা মিত্র জীবনী - বাঙালী কণ্ঠশিল্পী, রবীন্দ্রসংগীত গায়িকা

সুচিত্রা মিত্র জীবনী – বাঙালী কণ্ঠশিল্পী, রবীন্দ্রসংগীত গায়িকা

সুচিত্রা মিত্র (১৯শে সেপ্টেম্বর,১৯২৪ – ৩রা জানুয়ারী,২০১১) ছিলেন একজন প্রথিতযশা ও স্বনামধন্য বাঙালী কণ্ঠশিল্পী। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রসংগীতের একজন অগ্রগণ্য গায়িকা ও বিশেষজ্ঞ। সুচিত্রা মিত্র দীর্ঘকাল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান ছিলেন। সংগীত বিষয়ে তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। শেষ জীবনে তিনি রবীন্দ্রসংগীতের তথ্যকোষ রচনার কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি চলচ্চিত্রে নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী এবং অভিনেত্রীর ভূমিকাও পালন করেছেন। ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সঙ্গেও তাঁর দীর্ঘকালের যোগসূত্র ছিল। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর দৃপ্ত কণ্ঠে গাওয়া রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানটি বিশেষ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। ২০০১ সালে তিনি কলকাতার শেরিফ মনোনীত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন রোগভোগের পর ২০১১ সালের ৩রা জানুয়ারী, সোমবার কলকাতার বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুচিত্রা মিত্র।

সুচিত্রা মিত্র – সংক্ষেপে তথ্য

নাম সুচিত্রা মিত্র
জন্ম ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯২৪

গুঝাণ্টি স্টেশন, বিহার প্রদেশ,ব্রিটিশ ভারত

মৃত্যু ৩ জানুয়ারি ২০১১ (বয়স ৮৬)

কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

পেশা কণ্ঠশিল্পী, নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী, অভিনেত্রী, অধ্যাপিকা, রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষিকা, লেখিকা (শিশুসাহিত্য ও রবীন্দ্রচর্চা-বিষয়ক)
পিতা সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় (১৮৮৪-১৯৬৬)
মাতা সুবর্ণলতা দেবী
বিবাহ ধ্রুব মিত্র (১৯৪৭ সালের ১ মে)
সন্তান কুণাল মিত্র (১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন জন্ম হয় তাদের একমাত্র পুত্র সন্তানের)

সুচিত্রা মিত্রের জীবনী

১৯২৪ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর সুচিত্রা মিত্রের জন্ম। তাঁর পিতা রামায়ণ-অনুবাদক কবি কৃত্তিবাস ওঝা’র উত্তর পুরুষ সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় (১৮৮৪-১৯৬৬) ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও অনুবাদক; মায়ের নাম সুবর্ণলতা দেবী। পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান সুচিত্রা মিত্রের জন্ম হয়েছিল ঝাড়খণ্ডের ডিহিরী জংশন লাইনে শালবন ঘেরা গুঝাণ্টি নামে একটি রেলস্টেশনের কাছে, ট্রেনের কামরায়। তাঁদের পৈতৃক নিবাস ছিল উত্তর কলকাতার হাতিবাগান অঞ্চলে। কলকাতার বেথুন কলেজিয়েট স্কুলে তিনি লেখাপড়া করেছেন। স্কুল বসার আগে প্রার্থনা সংগীতের মতো করে গাওয়া হতো রবীন্দ্রনাথের গান। এখানে পড়ার সময় গানের চর্চা শুরু হয় দুই শিক্ষক অমিতা সেন এবং অনাদিকুমার দস্তিদারের কাছে। বিদ্যান্বেষী সুচিত্রা মিত্র পরবর্তীকালে পড়াশোনা করেছেন স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

খুব অল্প বয়সে তিনি রবীন্দ্রসংগীত শিখতে শুরু করেন। বাবা ছিলেন রবীন্দ্র সংগীতের বিশেষ অনুরাগী। বাড়ীতে সংগীতের নিবিড় আবহ ছিল। তুমুল আড্ডা হতো এবং তাতে গানও হতো। তিনি বসে বসে গান শুনতেন। তাঁর মা-ও গান করতেন। মায়ের গলায় “সন্ধ্যা হল গো ও মা” গানটি শুনে বালিকা সুচিত্রা মিত্রের চোখ জলে ভরে উঠতো। পঙ্কজকুমার মল্লিকের গান শুনে রবীন্দ্র সংগীত শেখায় বিশেষভাবে উৎসাহিত হয়েছিলেন। পরে তিনি যাদের কাছে গান শিখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন – ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী, শৈলজারঞ্জন মজুমদার এবং শান্তিদেব ঘোষ। ছেলেবেলায় তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষাৎ সাহচর্য লাভ করেছিলেন। ১৯৪১ সালে  ক্লাস টেন-এ পড়ার সময় শান্তিনিকেতনের সংগীত ভবন থেকে বৃত্তি লাভ করেছিলেন। ১৯৪২-এ ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেয়ার মায়া পরিত্যাগ করে তিনি শান্তিনিকেতন চলে যানা এর মাত্র কুড়ি দিন আগে রবীন্দ্রনাথ লোকান্তরিত হয়েছিলেন। ১৯৪৩-এ শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন। ১৯৪৫ খ্রীস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসাবে প্রাইভেটে ইন্টারমিডিযেট পরীক্ষা দেন। একই বছর রবীন্দ্র সংগীতে ডিপ্লোমা লাভ করেন৷ এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকেই অর্থনীতিতে সম্মান-সহ বিএ পাস করেন। ১৯৪৭ সালের ১লা মে তিনি ধ্রুব মিত্রের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৫০ সালের ২৩শে জুন জন্ম হয় তাঁদের একমাত্র পুত্র সন্তান কুণাল মিত্রের। কুণাল মিত্র বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা। ১৯৫৫ সালে  স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় সুচিত্রা মিত্রের।

কলেজ জীবনে তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাদের মুক্তির জন্য পতাকা হাতে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করেছেন, টিয়ার গ্যাসের ঝাঁঝে নাকাল হয়েছেন। মিছিল, প্রতিবাদ করতে গিয়ে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে মার পর্যন্ত খেয়েছেন। পরবর্তী জীবনে অবশ্য তিনি সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দেন। তবে তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরটি অক্ষুণ্ন ও অম্লান থাকে। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লী থেকে প্রচারিত আকাশবাণীর জাতীয় অনুষ্ঠানে তিনি রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন। আকাশবাণীতে জওহরলাল নেহেরুকে কটাক্ষ করে বাল্মিকী প্রতিভায় গান গাওয়ার অভিযোগে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ছ’বছর তিনি আকাশবাণীতে গান করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন।

তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘদিন। এখানে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় প্রভাষক হিসাবে। তারপর পদোন্নতি পেযে রিডার হয়েছেন, অধ্যাপক হয়েছেন এবং “রবীন্দ্র সংগীত বিভাগের” প্রধান হিসেবেও কাজ করেছেন৷ ২১ বছর একনাগাড়ে শিক্ষকতার পর ১৯৮৪ খ্রীস্টাব্দে তিনি রবীন্দ্র ভারতী থেকে অবসর নেন। রবীন্দ্র ভারতীতে অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত থাকাকালে তিনি বাংলায় এম এ পাস করেন।

একেবারে কৈশোরেই তাঁর শিল্পী জীবনের শুরু। ১৯৪৫-এ প্রথম তাঁর গানের রেকর্ড বেরোয় তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। সেটা রবীন্দ্র সংগীতের রেকর্ড:এক পিঠে “মরণেরে তুঁ হু মম শ্যাম সমান”, অন্য পিঠে “হৃদয়ের একুল ওকুল দু’কুল ভেসে যায়”। দ্বিতীয় রেকর্ডটি তাঁর পিতার লেখা গানঃ এক পিঠে “তোমার আমার ক্ষণেক দেখা”, অন্য পিঠে “আমায় দোলা দিয়ে যায়”। এরপর মৃত্যু অবধি তাঁর সাড়ে চার শরও বেশি রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড বের হয়েছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী সুচিত্রা মিত্র সম্পর্কে প্রয়াত ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতে, “রবীন্দ্রনাথের গানে সেরা হচ্ছে সুচিত্রা… সে বেশ গলা ছেড়ে পুরো দমে গায়। এর মধ্যে কোনো গোঁজামিল নেই… তার সাবলীলতা… সে এক দেখার এবং শোনার জিনিস। তার ছন্দজ্ঞানও অসামান্য… সুচিত্রা নিখুঁত। মনে হয় দিনেন্দ্রনাথ বুঝি ফিরে এলেন”।

বেশ কিছু চলচিত্রে প্লে ব্যাক গায়ক হিসেবেও গান গেয়েছেন৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আর সংগীতের প্রতি আশৈশব ভালবাসা আর তীব্র টানে তিনি পুরোপুরি নিজেকে উৎসর্গ করেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে তিনি রবীন্দ্র সংগীতের প্রধান শিল্পী হিসাবে আবির্ভূত হন। তাঁর গায়কী ঢং ছিল একেবারেই স্বতন্ত্র প্রকৃতির। তাঁর কণ্ঠ মাধুর্যের সঙ্গে ছিল এক ধরণের দৃঢ়তা । রবীন্দ্র সংগীতে তাঁর উচ্চারণ, স্বরক্ষেপণ, তাঁর কণ্ঠ আদর্শ হয়ে উঠেছিল। গান প্রাণ পেত তাঁর কণ্ঠে। রবীন্দ্র সংগীতের তুলনারহিত প্রতিমূর্তি হয়ে উঠেছিলেন তিনি অগণিত শ্রোতাদের কাছে । রবীন্দ্র সংগীত ছাড়াও তাঁর গলায় প্রাণ পেয়েছে অতুলপ্রসাদের গান, ব্রহ্মসংগীত, আধুনিক বাংলা গান এবং হিন্দি ভজন।

শান্তিনিকেতনে তিনি নানা বাদ্যযন্ত্র শিখেছেন: সেতার, এস্রাজ, তবলা। এসময় সহপাঠী ছিলেন নীলিমা সেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে শেষ পর্যন্ত তিনি কণ্ঠসংগীতই বেছে নিলেন। ধ্রুপদী সংগীত শিখেছেন ভি ভি ওয়াঝেলকরের কাছে। এ সময় কিছুদিন, প্রায় দুবছর নাচ শেখার চেষ্টাও করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই অভিনয় ভালোবাসতেন। তাই যখন রবীন্দ্র সংগীতের সেরা শিল্পীর তকমা জুটে গেছে, সে সময়, পরিণত বয়সে ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত দহন নামক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে নির্মিত উমাপ্রসাদ মৈত্রের জয় বাংলা এবং মৃণাল সেনের “পদাতিক”-এ অভিনয় করেছেন। এছাড়াও, বিষ্ণু পাল চৌধুরীর টেলিফিল্ম আমার নাম বকুল-এর একটি পর্বে তিনি অভিনয় করেন। দীর্ঘদিন তিনি ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বা ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

১৯৪১ সালে বৃত্তি নিযে গান শেখার উদ্দেশ্যে শান্তিনিকেতনে যাওয়ার আগেই তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটকে অভিনয় করেছেন। পরবর্তীতে যে সকল নাটকে অভিনয় করেছেন সেগুলো হলোঃ মুক্তধারা, বিসর্জন, তপতী, নটীর পূজা, মায়ার খেলা, চিরকুমার সভা ও নীলদর্পণ।

১৯৭৩ খ্রীস্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। ১৯৮৬ খ্রীস্টাব্দে সংগীত নাটক অকাদেমি এ্যাওয়ার্ড তিনি পেয়েছেন ; এছাড়া এইচএমভি গোল্ডেন ডিস্ক এ্যাওয়ার্ড, বিশ্বভারতী থেকে দেশিকোত্তম এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে আলাউদ্দিন পুরস্কার লাভ করেছেন। আরো পেয়েছেন সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার-সহ নানা সম্মান। সাম্মানিক ডি-লিট পেয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

রবীন্দ্র সংগীত নিয়ে তিনি গবেষণামূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন। ছোটদের জন্য লিখেছেন কবিতা ও গল্প; লিখেছেন স্মৃতিকথা। তিনি কক্বাহলিল জিবরানের কবিতার অনুবাদ করেছেন। সুচিত্রা মিত্র আবৃত্তি করতে ভালবাসতেন। ছবি আঁকা ছিল তাঁর আরেকটি নেশা। ছবির প্রদর্শনী পর্যন্ত তিনি করেছেন। কর্মযোগী সুচিত্রা মিত্র ১৯৪৬-এ কলকাতায় রবীন্দ্র সংগীতের স্কুল “রবিতীর্থ” স্থাপন করেন। ভারতে এটি রবীন্দ্র সংগীত শিক্ষার অগ্রগণ্য বিদ্যাপীঠ হিসাবে পরিগণিত। স্কুলের নামটি অধ্যাপক কালিদাস নাগ কর্তৃক প্রদত্ত। রবিতীর্থের তিনি ছিলেন প্রধান শিক্ষিকা। রবিতীর্থের শিক্ষার্থীদের নিযে তিনি বহুদেশে নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেছেন।

তাঁকে নিযে কবিতা লিখেছেন বিষ্ণু দে এবং নীরেন্দ্রনাথ। তাঁর আবক্ষ মূর্তি গড়েছেন শিল্পী রামকিংকর ১৯৫২ খ্রীস্টাব্দে; প্রামাণ্য চলচ্চিত্র তৈরী করেছেন সুব্রত ঘোষ ও রাজা সেন। তিনি সংস্কৃতি এবং আভিজাত্যকে সমন্বিত করেছিলেন সংগীত চর্চার মাধ্যমে, নিজ জীবনাচরণে। ওস্তাদ আমজাদ আলী খান সুচিত্রা মিত্রকে বর্ণনা করেছেন রবীন্দ্রনাথের এক উজ্জ্বল প্রতীক হিসাবে। ১৯৯৫ সালে আজকাল পত্রিকার উদ্যোগে প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মকথা “মনে রেখো”।

বাংলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছিলেন তিনি। সমসাময়িক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের কাছে তিনি ছিলেন জনপ্রিয়ও সম্মানীয়। তাঁকে নিয়ে অনেকেই কবিতা রচনা করেছেন। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী লিখেছেন:

“আকাশ যখন চক্ষু বোজে

অন্ধকারের শোকে

তখন যেমন সবাই খোঁজে

সুচিত্রা মিত্রকে,

তেমন আবার কাটলে আঁধার

সূর্য উঠলে ফের

আমরা সবাই খোঁজ করি কার?

সুচিত্রা মিত্রের।

তাঁরই গানের জোৎস্নাজলে

ভাসাই জীবনখানি

তাইতো তাকে শিল্পী বলে

বন্ধু বলে জানি।”

জীবনের একেবারে শেষপর্বে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে গান শেখানো প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিলেন সুচিত্রা মিত্র। কেবল ছাত্রছাত্রীরা তাঁর কাছ থেকে ভুলত্রুটি শুধরে নিতে অথবা তাঁর আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে তাঁর বাড়িতে আসতেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০১১ সালের ৩রা জানুয়ারী দ্বিপ্রাহরিক আহারের সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তিনি রেখে যান তাঁর একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী পুত্র কুণাল মিত্রকে। ৪ঠা জানুয়ারী তাঁর মরদেহ নিয়ে এক বিরাট গণশোকযাত্রা বের হয়। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি (রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাপ্রাঙ্গন), রবীন্দ্রসদন ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগীত বিদ্যালয় রবিতীর্থে গুণমুগ্ধ, অনুরাগী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরা তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অপরাহ্নে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। পরে গঙ্গায় শিল্পীর অস্থি-বিসর্জন দেন তাঁর কন্যাসমা ভাইঝি সুদেষ্ণা চট্টোপাধ্যায়।

সম্মাননা:

১৯৪৫: লন্ডন টেগোর হিম সোসাইটি প্রদত্ত টেগোর হিম প্রাইজ

১৯৫০: নিখিল বঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনে স্বর্ণপদক

১৯৭৪: ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মশ্রী সম্মান

১৯৭৯: বাংলা চলচ্চিত্র পুরস্কার সমিতি প্রদত্ত পঙ্কজ মল্লিক স্মৃতি পুরস্কার

১৯৮০: এইচএমভি প্রদত্ত গোল্ডেন ডিস্ক অ্যাওয়ার্ড

১৯৮৫: ভারত সরকার প্রদত্ত সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার

১৯৮৫: এশিয়ান পেইন্টস প্রদত্ত শিরোমণি পুরস্কার

১৯৯০: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সাম্মানিক ডি.লিট.

১৯৯৭: বিশ্বভারতী প্রদত্ত দেশিকোত্তম

১৯৯৭: পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত আলাউদ্দিন পুরস্কার

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সাম্মানিক ডি.লিট.

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সাম্মানিক ডি.লিট.

সৌজন্যে : উইকিপিডিয়া

সুচিত্রা মিত্র জীবনী – রবীন্দ্রসংগীত, বাঙালী কণ্ঠশিল্পী

আশা করি এই পোস্টটি বা “সুচিত্রা মিত্র জীবনী – রবীন্দ্রসংগীত, বাঙালী কণ্ঠশিল্পী” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। ঐতিহাসিক ঘটনা বা বিখ্যাত ব্যাক্তিদের জীবনী সম্পর্কে জানতে এই The Famous Day ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *