Close Ad close
Breaking
Mon. Sep 30th, 2024

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল

১৯০১ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়া ৯৪ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন। ৬৩ বছর ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শাসন করা এই সম্রাজ্ঞীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে, তৎকালীন ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন কলকাতায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের পরিকল্পনা করে।

ভারতে অবস্থিত ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতির শ্রেষ্ট নিদর্শন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সম্পর্কে জানব শুকতারা Tv-র এই পর্বে।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল স্থাপত্যটির নকশা প্রস্তুতি

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল স্থাপত্যটির নকশা প্রস্তুত করেছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি স্যার উইলিয়াম এমারসন এবং ১৯০২ সাল নাগাদ পরিকল্পনাটি অঙ্কনের ভার দেওয়া হয় ভিনসেন্ট নামে এক শিল্পীকে। নির্মাণের বরাত পেয়েছিল মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানি। প্রায় ১০৩ মিটার লম্বা, ৭০ মিটার চওড়া এবং ৫৬ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এই স্থাপত্য। তাজমহলে ব্যবহৃত সাদা মার্বেল পাথর এখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই পাথর নিয়ে আসা হয় বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্গত মাকরান অঞ্চল থেকে। যেহেতু কার্জন সাহেবের কাছে তাজমহল অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল, সেই কারণে তিনি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন খুঁত রাখতে চাননি। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছিল স্থাপত্যটি নির্মিত হবে রানি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিতে এবং অন্যদিকে এটি একটি সংগ্রহালয়েরও কাজ করবে।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল স্থাপত্যটির নির্মাণশৈলী

ঔপনিবেশিক স্থাপত্যরীতিতে নকশা করা হলেও এ ভবনটিতে মুঘল ও ইসলামী স্থাপত্যশৈলীর সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে। যেমন এতে রয়েছে ইতালিয় রীতির মূর্তি, মুঘল রীতির গম্বুজ, তাজমহলের মত সাদা মার্বেলের ব্যবহার এবং সুউচ্চ স্তম্ভশ্রেণি। ইতালিয় রেনেসাঁর ভবন নির্মান শৈলীর সাথে তাজমহল নির্মানের অনেক কৌশল এখানে প্রয়োগ করা হয়। ভবন নির্মানে ব্যবহৃত সাদা মার্বেল, উন্মুক্ত চত্ত্বর, পার্শ্ববর্তী গম্বুজ টাওয়ার এবং সুউচ্চ প্রবেশদ্বার সেই ধারণাই নিশ্চিত করে। তাজমহল ও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের মধ্যকার সবচেয়ে বড় কাকতালীয় সাদৃশ্য হল, দুটি ভবনই নির্মান করা হয়েছে ভারতের দুজন সম্রাজ্ঞীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল স্থাপত্যটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব গ্রহণ

উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট সিটি হলের আদলে স্যার উইলিয়াম এমারসন ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামো নকশা করেন। এরপর বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ভিনসেন্ট ইসচ সেই নকশার সৌন্দর্য বর্ধন করেন। স্মৃতিসৌধটি নির্মানের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় কলকাতার মেসার্স মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানি কে। লর্ড কার্জনের তত্ত্বাবধানে ১৯০৪ সালে নির্মান এলাকা প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়। ১৯০৬ সালের ৪ জানুয়ারি কলকাতার বিখ্যাত গড়ের নমাঠের দক্ষিণ প্রান্তে এই ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন সেসময় ভারত সফরে আসা প্রিন্স অফ ওয়েলস; পরবর্তীকালের রাজা পঞ্চম জর্জ। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন যখন ভারত ছেড়ে চলে যায় তখনও এর কাজ ঠিকমত শুরুই হয়নি। তারপরবর্তী ভাইসরয়গণ মেমোরিয়াল নির্মানের ব্যাপারে ততটা আগ্রহী না হওয়ায় এর নির্মান কাজ অনেকটা পিছিয়ে যায়। তাই ভবনের উপরিকাঠামো নির্মানের কাজ শুরু হয় ১৯১০ সালে। এবং ১৯২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রিন্স অফ ওয়েলস ও পরবর্তীকালের রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল প্রদর্শনী

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়বে রানী ভিক্টোরিয়ার বিরাট এক মূর্তি। এই মূর্তির দুইপাশে রয়েছে দুটি বিশাল জলাশয়। মূল স্মৃতি ভবন, সাজানো বাগান ও পুকুর সহ পুরো আঙ্গিনাটির আয়তন ৬৪ একর। ভবনটি দৈর্ঘ্যে ৩৩৮ ফুট এবং প্রস্থে ২২৮ ফুট। ভবনটির সর্বমোট ওজন হিসাব করা হয়েছে ৮০ হাজার ৩০০ টন। ভবনের উপরে স্থাপিত ‘অ্যাঞ্জেল অব ভিক্টরি’ মূর্তি পর্যন্ত এর উচ্চতা ১৮৬ ফুট এবং শুধু মূর্তিটির উচ্চতা ১৬ ফুট। ৩ হাজার ৫০০ কেজি ওজনের মূর্তিটি, বল-বিয়ারিংয়ের সাহায্যে বেদির সাথে সংযুক্ত। বাতাসের গতিবেগ অত্যন্ত বেশি হলে মূর্তিটি তার বেদির উপর ঘুরতে পারে। এছাড়া ভবনটির উভয়পাশের প্রবেশদ্বারের উপরে এবং গম্বুজের নিচের অংশে রয়েছে একাধিক মূর্তি। প্রবেশদ্বারের উপরের ভাস্কর্যগুলি মাতৃত্ব, প্রজ্ঞা ও শিক্ষার প্রতীক হিসেবে নির্মিত। এবং প্রধান গম্বুজকে ঘিরে থাকা ভাস্কর্যগুলি শিল্প, স্থাপত্য, ন্যায়বিচার ও বদান্যতা প্রতীক। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ২৫টি গ্যালারির রয়েছে; এরমধ্যে ‘কুইন্স হল’টি হল আকর্ষণের মূল কেন্দ্র। এখানে রানীর স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্নসামগ্রী সংরক্ষিত আছে। এছাড়া বর্তমানে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলের প্রায় ৩ হাজার ৫০০টি নিদর্শন রয়েছে।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল নির্মাণে ব্যয়সমূহ

ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধটি নির্মানে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা। এই সম্পূর্ণ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল ভারতীয় বনেদি ব্যবসায়ী ও দেশীয় রাজ্যের রাজাদের কাছ থেকে। বলা হয়ে থাকে যে, ভবনের সম্পূর্ণ নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের জন্য প্রয়োজন ছিল একটি ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রেনের। ভবনটি নির্মানে প্রায় ১৫ হাজার ৯০০ ঘনফুট সাদা মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে; যার পুরোটাই সংগ্রহ করা হয়েছিল রাজস্থানের মাকরানা থেকে। এখান থেকেই সম্রাট শাহজাহান তাজমহলের জন্য মার্বেল সংগ্রহ করেছিলেন।

রাত্রিবেলায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল

সন্ধ্যা নামার সময়, সাদা মার্বেলের ভবনটি গোধূলি আলোয় স্নানিত দ্যূতিময় দেখায়। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-এ একটি আলোক ও ধ্বনি প্রদর্শনী আয়োজিত হয়; যাতে কলকাতার ইতিহাস তুলে ধরা হয়, যা আজও পর্যন্ত সমস্ত বাঙালির মধ্যে মহান গর্বের বিষয় হয়ে রয়েছে।

কখন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পরিদর্শনে যাবেন?

শীতকালে, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাসগুলি সবসময়ই কলকাতা পরিভ্রমণের সেরা সময়। তবে, আপনি যদি কলকাতার বিখ্যাত দূর্গা পূজা উৎসব দেখতে চান, তাহলে একটু আগেও আসতে পারেন। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যেহেতু এখানকার আবহাওয়া অত্যন্ত উষ্ণ ও আর্দ্র থাকে, তাই এই মাসগুলিকে এড়িয়ে যাওয়াই বাঞ্চনীয়। এছাড়াও জুলাই ও আগস্টের সময় মুষলধারায় বৃষ্টি, আপনার এই শহর পরিদর্শনের আনন্দ উপলব্ধির পরিকল্পনাকে বিরূপ করে তুলতে পারে।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল – QNA

1.ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের প্রস্তুতি কাজ কত সালে শুরু হয় ?

Ans: 1902 সালে ।

2.ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কার স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয় ?

Ans: মহারানী ভিক্টোরিয়া ।

3.ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল স্থাপত্যটির নকশা প্রস্তুত করেছিলেন কে ?

Ans: ব্রিটিশ স্থপতি স্যার উইলিয়াম এমারসন ।

4.ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে কতগুলি গ্যালারি রয়েছে ?

Ans: ২৫টি ।

5.ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আকর্ষণের মূল কেন্দ্র কোনটি ?

Ans:‘কুইন্স হল’টি হল আকর্ষণের মূল কেন্দ্র।

  আশা করি এই পোস্টটি ” ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ” থেকে আপনি উপকৃত হবেন। প্রতিদিন এরম আশ্চর্যজনক, রোমাঞ্চকর, অজানা এবং অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই SuktaraTv.com ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *